ধরা

কৈশোর (মার্চ ২০১৪)

মিছবাহ উদ্দিন রাজন
  • ১২
প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । বিকাল থেকেই আহসানের রুমের দরজা বন্ধ । ব্যাপারটা নজরে আসার সাথে সাথেই আহসানের মা এসে দরজায় টানা কয়েকবার চাপড় মেরে আহসানকে ডাকতে লাগলেন ।
প্রথম কয়েকবারের ডাকাডাকিতে ভেতর থেকে কোন সাড়াই মিললো না । বাইরে শহরজুড়ে গোধূলির আবছা অন্ধকার । ভেতর থেকে কোন সাড়া না পেয়ে মুহূর্তেই মায়ের মুখটা দিনের আলো হারাতে থাকা গোধূলির আবছা অন্ধকারের মতোই বিষণ্ণ হয়ে উঠলো । তিনি দরজায় আরো ঘনঘন চাপড় মারতে লাগলেন এবং উদ্বিগ্ন গলায় বলতে লাগলেন, “ আহসান , আহসান , সারাদিন রুমের
ভেতরে কী করছিস বাবা ? দরজাটা একটু খোল । ”
মা আসার আগ পর্যন্ত টেবিলে বসে বসে একটা পেন্সিল স্কেচ করছিলো আহসান। এমনিতে বিকালবেলা সচরাচর রুমের ভেতরে বসে থাকে না সে । যেহেতু খেলাধুলা করার মতো পাড়ায় এতো বড় কোন মাঠ নেই , তাই পাড়ার ভেতরে নতুন নতুন বিল্ডিং তোলার
জন্য অল্প উঁচু সীমানা প্রাচীর দেওয়া প্লটগুলোর মধ্যে সুবিধাজনক কয়েকটা প্লটই ছেলেদের খেলার মাঠ । এগুলোর মধ্যেই একটা প্লট আহসান আর তার বন্ধুদের গ্রাউন্ড শটের ক্রিকেট আর মিনিবারের ফুটবল খেলার জায়গা । হোমওয়ার্কের বাড়তি চাপ বা অসুস্থতা ছাড়া বিকালবেলা কোনদিনই খেলায় না গিয়ে রুমে বসে থাকতে পারে না আহসান। বাসার ভেতরে আটকে থাকা শহুরে জীর্ণ বাতাসে দম বন্ধ হয়ে আসতে চায় তার।
কিন্তু আজকে ওই কান্ডটা ঘটিয়ে ফেলার পর মায়ের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যেতে কোনভাবেই সাহস করতে পারছিলো না আহসান ।
লজ্জাও হচ্ছিলো খুব । লুকিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বেশ কয়েকবার ব্যর্থ হওয়ার পর আর কোন কাজ না পেয়ে পেন্সিল স্কেচ করতে বসেছিলো সে । নিতান্তই অন্য কোন কাজ না পেয়ে ( অবসর সময়ে পড়াশোনা করতে কার বা মন চায় ! সুতরাং এই সময়ে পড়াশোনাও কোন কাজের আওতায় পড়ে না তার কাছে।) অনেক্ষণ ধরে অকারণ আঁকিবুঁকির পরে হঠাতই আশ্চর্যজনকভাবে স্কেচ করায় তার গভীর মনোযোগ এসে গিয়েছিলো । ঠিক এই সময়ই মা এসে দরজায় করাঘাত শুরু করে দিলেন ।
ভেতর থেকে দরজায় মায়ের ধাক্কাধাক্কির শব্দ শোনে কিছুটা অপ্রস্তুতহয়ে পড়লো আহসান । স্কেচ করার মনোযোগটা গেলো নষ্ট হয়ে । আবার এই মুহূর্তে দরজা খুলতে যাওয়ার মতো সাহসও হচ্ছে না তার ।
অস্বস্তি লাগছে খুব । “ কী হয়েছে বাবা তোর? দরজা খুলছিস না কেন ?” এবার সত্যি সত্যি মায়ের গলা ধরে এসেছে বোঝা যাচ্ছে ।
মুক্তার মতো চকচক করতে থাকা মায়ের চোখের অশ্রুটুকু গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার জন্য অধৈর্য হয়ে উঠছে হয়তো । মায়ের চিন্তিত মুখটার কথা মনে করতে গেলে শৈশবের কথা আপনা আপনিই আহসানের মনে পড়ে যায় ।
ছোটবোন টিনির জন্মের পরই আহসানকে আলাদা রুমে থাকার জন্য চলে যেতে হয়েছিলো । তখন সে খুব ছোট । মায়ের পাশে শোয়ার জন্য ভেতরে ভেতরে একটা চাপা কান্না হুঁ হুঁ করে বেজে উঠতো প্রায়ই । প্রায় রাতেই ঘুমের ঘোরে অন্ধকার হাতড়ে মাকে খুঁজে বেড়াতো সে। পরক্ষণেই আবার মায়ের পাশে ঘুমিয়ে থাকা বড় বড় চোখের পুতুলটার কথা মনে হলেই আপনা আপনি সব দুঃখ মুছে যেতো তার।
আস্তে আস্তে পুতুলটা বড় হতে থাকলো । কথা বলতে শিখলো ।
হাঁটতে শিখলো । আহসানও তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধুটার সাথে হেসে-খেলে বড় হতে লাগলো ।
মা-বাবা দুজনকেই কাছে পেত দুই ভাই-বোন । এরপরও স্নেহহীন ধূ ধূ প্রান্তরের মতো নিজের ভেতরে একটা শূন্যতা অনূভুত
হতো আহসানের । মাতৃস্নেহের জন্য মানুষের হৃদয়ের এই শূন্যতা আমৃত্যু লেপটে থাকে অস্তিত্বের সাথে । যতই পায় কিছুতেই মন ভরে না, একটা অপূর্ণতা সবসময় থেকেই যায় ভেতরে ভেতরে ।
এরকম সময়ে অকারণেই জ্বরের ভান ধরে পড়ে থাকতো আহসান ।
মা এসে কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করতেন । জ্বরের কোন লক্ষণ না পেয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করতেন, “কই , নাতো । জ্বরের তো কোন লক্ষণই নেই ।”
“আছে ,আছে । মাথাব্যথা করে খুব ।”
“ তাহলে প্যারাসিটামল খেয়ে শুয়ে থাক । তোর বাবা আসলে দেখি কী করা যায় ।”
“ওষুধ –টশুধ লাগবে না মা । তুমি বরং আমার মাথায় পানি ঢালো । বাবা আসলে পরে ওষুধের চিন্তা করা যাবে ।”
মা অনেক্ষণ ধরে চিন্তিত মুখে আহসানের মাথায় পানি ঢালতেন । টিনি একটা চাকা ভাঙ্গা খেলনার গাড়ি ঠেলতে ঠেলতে আহসানের
রুমে এসে এই দৃশ্য দেখে কিছুই বুঝতে না পেরে বড় বড় চোখ দুইটা আরো বড় বড় করে থাকিয়ে থাকতো শুধু । গম্ভীর একটা সুখানুভূতিতে চোখ দুইটা ভিজে আসতো আহসানের । এরপর বাবা বাসায় ফেরার আগেই সে পড়ার টেবিলে । জ্বর ভালো হয়ে যেতো তারও অনেক আগে ।
যাহোক , মায়ের চেঁচামেচিতে একটা হুলস্থূল কান্ড ঘটার সম্ভাবনা আন্দাজ করতে পারলো আহসান । তাই আর দেরি না করে দরজা খুলতে গেলো সে । দরজা খুলে অপরাধির ভঙ্গিতে মাথা নিচু করে মায়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো । বাম হাত দিয়ে তার বাম গালের
কেটে যাওয়া অংশটুকুতে চেপে ধরা ।
মা তো তাকে দেখেই অবাক । চোখ তাঁর টলমল করছে । কপালে চিন্তার রেখা স্পষ্ট ।
“কী হয়েছে তোর ? সারাদিন ধরে রুমের ভেতরে কী করছিলি? গালে কী হয়েছে? দেখি , দেখি । ”
লজ্জায় আহসানের মুখ রক্তবর্ণ ধারণ করে ফেলেছে এতক্ষণে । অস্বস্তি নিয়েই গালের উপর থেকে হাতটা সরালো সে । এক মুহূর্তের মধ্যেই মায়ের অভিব্যক্তি বদলে গেলো । ছেলের লজ্জা পাওয়ার কারণ ধরতে পেরে মুচকি হাসলেন তিনি ।
প্রথমবার শেভ করে প্রথমবারই আহসান মায়ের কাছে ধরা খেলো !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Fahmida Bari Bipu Very nice and simple style of writing. .like it.
ভালো লাগেনি ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪
অসংখ্য ধন্যবাদ ।
ভালো লাগেনি ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৪
মিলন বনিক ওয়াও! চমৎকার গল্প...আমার জীবনে প্রথম শেভ করার আগে একটা ছবি তুলে রেখেছিলাম...খুব ভালো লাগলো....শুভকামনা...
ধন্যবাদ দাদা । ছবিটা কি এখনো রেখে দিয়েছেন ?
হ্যাঁ...ঐটায় আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর ছবি....
এশরার লতিফ সুন্দর লিখেছেন যথারীতি, শুভেচ্ছা।
আপনার মন্তব্যগুলো থেকে সবসময়ই অনুপ্রাণিত হই । ধন্যবাদ ভাইয়া ।
নাজমুছ - ছায়াদাত ( সবুজ ) খুব সহজ সরল লেখা ।
সকাল রয় ভালো। ভালো বই পড়ুন। মাথা থেকে লেখা বেড়িয়ে আসবে।
নাফিসা রহমান একেবারেই অন্যরকম গল্প। ভালো লাগল
সাদিয়া সুলতানা খুব সহজ সরল ভাষায় সরল অনুভূতি....ভাল লাগা রইল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
ওয়াহিদ মামুন লাভলু কৈশোরের বাস্তব গল্প। খুব ভাল লাগল। শ্রদ্ধা জানবেন।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।
Salma Siddika ভালো লিখেছেন , আমার ভালো লেগেছে
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
তাপসকিরণ রায় কিশোর মনের সুন্দর এক দিক ফুটে উঠেছে--মা ছেলের অনুভুতিপ্রবণ দিকটা ধরা পড়েছে। ভাব ব্যপ্তি বেশ ভাল লেগেছে।
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।

০৬ এপ্রিল - ২০১৩ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪